Ticker

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

Responsive Advertisement

উদ্যোক্তাদের ফেইল হওয়ার কারণ সমূহ By আলি মেসে

মূল: আলি মেসে

অনুবাদ: ফারুক আব্দুল্লাহ
আলি মেসে
আলি মেসে

দুইবছর আগে আজকের দিনে, আমার ঘুম ভাঙছিল ভোর পাঁচটায়, আমি তখন এই প্রজন্মের “নিউ স্লিপিং প্রব্লেম” এ ভূগতেছিলাম।
অতিরিক্ত নীল আলো চোখে পড়লে, ঘুমের এইরকম সমস্যা হয়। বিশেষ করে, ঘুমায় পড়ার আগে অনেকক্ষণ সেলফোনের দিকে তাকায় থাকলে, অল্প কয় ঘণ্টা পরই আপনি জাইগা যাবেন। আমি ভাবছিলাম আর ঘুমানোর চেষ্টা করাটা বৃথা, তাই উঠে বরং কাজ শুরু করি।
আমার ইমেইল চেক করার পর, টুইটারে গেলাম। ওখানের একটা টুইটের সূত্র ধরে রেইলসে রুবির ব্যবহার নিয়া টেকনোক্রাঞ্চের একটা আর্টিকেল পড়লাম। সেই আর্টিকেল আমাকে কোডেকাডেমিতে নিল। যেইখানে আসলেই কোড কেমন করে করতে হয় তা শেখা যায়।
এর মাঝে এক বন্ধু ফোন দিয়া আমার মনোযোগের বিঘ্ন ঘটাইল। ফোনে থাকতে থাকতেই আমার মনে হইল আজকে আমার আর এক বন্ধুর জন্মদিন। সেই কারণে তারে শুভেচ্ছা বলতে ফেসবুকে লগইন করলাম। আমার নিউজফিডের টপ পোস্টটা ছিল একটা নতুন সোশ্যাল নেটওয়ার্কের উপর।
আমি দেখতে গেলাম আসলে কী ব্যাপার, সাউন্ডক্লাউডের উপর লেখাটা পইড়া আমি চমকায় গেলাম বেশ, আইডিয়াটা আমারে টানতেছিল, তাই আরো দুইঘণ্টা ওইটার পিছনে দিলাম।
আন্দাজ করেন তো এর পরে কী? আমি নতুন একটা আইডিয়া বাইর করলাম, যেইটা সাউন্ডক্লাউডের থেকেও ভাল! একটু পরেই আমি আইডিয়ার অভিনবত্বে ঘুরতে ঘুরতে কাহিল হয়ে গেলাম।
এখনো শেষ না, আর একটা টুইট দেখলাম, এইটা আবার কীভাবে কতটা স্টেপে… শিখবেন। সেই টুইট বুঝতে গিয়ে আমি ইঙ্ক ডটকমে গেলাম, সেখানে আর এক ঘণ্টা।
ঠিক আছে, বাদ দেন! আমি তখন একজন উদ্যোক্তা ছিলাম।
তখন মধ্যরাত, দুইটা বাজে, আমি এইরকম আর একটা সারাদিন নষ্ট করলাম, এই ওয়েবসাইট থেকে সেই ওয়েবসাইটে ছোটাছুটি ছাড়া আর কিছুই করা হয় নাই।
আমার মাথা ব্যথা করতেছিল, চাপ লাগতেছিল, কপাল টন টন করতেছিল। আমি বিছানায় শুয়ে ফেসবুকে ঢুকলাম।
অ! আমি আসলে আমার বন্ধুর জন্মদিনের উইশটাও করি নাই আর।
enterp56দুই বছর আগের ওই দিনে, আমি আমার কাজ করার ধরন পাল্টায় ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়া নিলাম, কারণ আমি দেখছিলাম, এই রকম মনোযোগ হারায় ফেলে আমি কিছু করতে পারতেছিলাম না, যেটা খুবই বিরক্তবোধ করাইতেছিল। ওই সময় আমি কোন স্থির লক্ষ্য না থেকে, এক আইডিয়া থেকে আরেক আইডিয়ায় ছুটছিলাম, কিন্তু কিছুই দাঁড় করাতে পারতেছিলাম না। আর একটা জিনিস, সেটা হইল, আমি তখনও কিন্তু নিজেকে উদ্যোক্তাই ভাবতে চাইছিলাম।
ফোকাস হারানোই হইল এই প্রজন্মের উদ্যোক্তাদের নয়া ব্যাধি।
চারপাশে মেলা কোলাহল, প্রচুর তথ্যের ভার। এইসবরে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে আপনি ব্যর্থ হইতে বাধ্য।
অবশ্য এ ক্ষেত্রে আমাদের কিছু অজুহাত থাকে, যেমন আমারগুলা ছিল এমন
“যেহেতু আমি একজন উদ্যোক্তা আমার অনুপ্রেরণার দরকার আছে। সফল উদ্যোক্তা হইতে হইলে আমারে অবশ্যই নতুন জিনিসগুলার সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। আর আমি জানতে আগ্রহী।”
ঠিক আছে! আমরা উদ্যোক্তরা স্বভাববতই কৌতূহলী। কিন্তু বেশি কৌতূহল ভাল না। সব কিছুরে বেশি জটিলভাবে দেখতে গেলে লক্ষ্য আর উদ্দেশ্য থেকে সইরা যাইতে থাকবেন। যার কারণে আর কিছুই করা হয় না।
আমি আমার জীবন বদলায় ফেলতে যেটা করছিলাম:
১) আশেপাশের পরিবেশের উপর নিয়ন্ত্রণ ধইরা রাখা
আমার পরিচিত গণ্ডির ভেতরে এন্টারপ্রেনারদেরই সব থেকে স্মার্ট মনে হইছে। মানে তাদের ধরনটাই এমন সেইরকম না ব্যাপারটা, বরং আমার মনে হয় তারা যেই প্রক্রিয়ার ভিতর দিয়া যায় তাতে প্রচুর মাথা খাটাইতে হয়। তাদের আশেপাশের কর্পোরেট অংশের কর্মীদের থেকে তা অনেক বেশিই। সাধারনত কর্পোরেট একজন কর্মীর বেলায় ঘড়ির কাঁটায় দিন শুরু করতে হয় আর যখন তারা ঘরে ফেরে তখনই তাদের দিনটা শেষ হয়। এটা আবার উদ্যোক্তাদের বেলায় না।
এই সুবিধাটাকে কীভাবে কাজে লাগায়ে নিয়ন্ত্রণ আনবেন সেটা একটা বিষয়। আমি যা করছিলাম তার বিবরণ দিলাম, দেইখা সোজা লাগলেও, কীভাবে করবেন সেইটা কিন্তু একটা বড় চ্যালেঞ্জ।

  • সকালে কফি খাইতে খাইতে কাগজে ‌ওই দিনের জন্য আপনার কী কী কাজ সেইগুলার এক লিস্ট একটুকরা কাগজে লেখেন, ছোট একটা কাগজেই কিন্তু। বেশি চাপ নিবেন না। যে কয়টা কাজ করতে পারবেন, মানে যেই টার্গেট শেষ করতে পারবেন ততটুক টার্গেট করেন। আর ব্রেকফাস্ট শেষ না কইরা পিসি চালু কইরেন না যেন।
  • সকালের প্রথম দুই ঘণ্টা ইমেইল চেক, টুইটার, ফেসবুকিং ইত্যাদি থিকা দূরে থাকেন। দেইখেন এটা সারা দিনে আপনার কাজের গতিতে কেমন চেনজ আনে। ফেসবুক টুইটার দিয়া নিয়ন্ত্রিত না হইয়া নিজের নিয়ন্ত্রণ নিজের কাছে রাখেন।
  • একদম পুরাপুরি অফলাইনে থাকেন। অ্যান্টি-সোশ্যাল কিংবা কোল্ডটার্কি সফটওয়্যারের মত কিছু টুলসের সাহায্য নিতে পারেন চাইলে। বিশেষ কইরা ফেসবুক বা যে সাইটগুলা আপনার মনোসংযোগে বিঘ্ন ঘটায়, সেগুলা থেকে দূরে থাকেন। আমি নিজে ‘কোল্ড টার্কি’ ইউজ করি। এইটা ফ্রি। হয়ত কয়েক ঘণ্টা আমার চূড়ান্ত মনোযোগ দরকার, তখন আমি মনোযোগ নষ্ট করতে পারে তেমন সাইটগুলা থেকে পুরাই অফলাইন হই। আপনি চাইলে আপনার গোটা ব্রাউজারও বন্ধ কইরা রাখতে পারেন (যেমন গুগল ক্রোম ইত্যাদি)।
  • ঘুমানোর সময় “ব্লু লাইট” ডিভাইসগুলি (যেমন মোবাইল, ট্যাব ইত্যাদি) কখনোই সাথে নিয়েন না। ওই সময়টা নিজের কাজের বাইরের কিছু করেন। বই পড়তে পারেন বা বন্ধুবান্ধবের সাথে গল্পগুজব করতে পারেন বা সামাজিকতাও করতে পারেন। নিজের কাজের বাইরের এইসব কাজ দুইটা কারণে জরুরি। প্রথম কারণ এইসব আপনার সৃষ্টিশীলতার জন্য স্বাস্থ্যকর, আপনারে আরো উদ্যমী এবং তরতাজা রাখবে, কাজের চাপে কাহিল হয়ে পড়বেন না। দুই নম্বর, আপনার শরীর মেলাটনিন তৈরি করতে পারবে পর্যাপ্ত পরিমাণ। নীল আলো মেলাটনিন তৈরির স্বাভাবিক সাইকেলরে ব্যাহত করে। যেকোন ফ্রেশ ঘুমের জন্য এই মেলাটনিন হরমোন সব থেকে দরকারি উপাদানগুলার একটা।
যাই ঘটুক, আপনার পরিবেশের উপর নিজের নিয়ন্ত্রণ ধইরা রাখেন। কারণ আপনিই আপনার সাথে পরিচিত হওয়া সব থেকে স্মার্ট মানুষ!


২) যেকোনো একটা ব্যাপাররেই জীবনের লক্ষ্য ঠিক করেন যেইটার জন্য আপনি স্বতঃস্ফূর্ত আকর্ষণ অনুভব করেন, সেইটারে খুঁইজা বাইর করেন
এইটা রকেট সায়েন্সের মত জটিল কিছু না, যেহেতু আপনি আপনার জীবনের প্রথম প্রেম বিচরাইতেছেন না এখানে। আর আপনারা যখন লেখাটা পড়তেছেন, ধইরা নেয়া যায় আপনারা এর মাঝেই অন্তত আঠার বছরের জীবন কাটায় ফেলছেন। সেহেতু আপনার কোনটা ভাল লাগে, কোনটা ভাল লাগে না সেই বিষয়ে মোটামুটি একটা ধারণা আছে। মনে রাইখেন, চাকা নতুন করে আবিষ্কার করার কোন দরকার নাই।
যে কাজটায় আপনার আন্তরিক টান আছে সেইটাই করেন, যেটা আপনার এবং অন্য মানুষজনের জীবনে পরিবর্তন আনতে পারবে। যেই কাজটা আপনি অন্যদের থেকে ভাল পারেন বলে মনে করেন, কিংবা যা চলতেছে সেটার মধ্যে নতুন কোন “ভ্যালু অ্যাড” করা সম্ভব সেইটা নিয়া ভাবতে থাকেন।

আমি মানি অনুপ্রেরণার দরকার আছে। কিন্তু লাখ লাখ ওয়েবসাইটে ক্রমাগত ঘুরপাক খাইতে গেলে আসলে পথ হারায় ফেলবেন। ন্যূনতম কোন দিকনির্দেশনাও পাবেন না এইসব থেকে।
কেমন করে আপনি বুঝবেন যে আপনার পছন্দের পথটাই আপনি খুঁইজা পাইছেন? এক্ষেত্রে মার্ক ক্যুবানের‘ব্যবসা শুরুর ১২ নিয়ম’ আপনারে নিশ্চিত করতে পারে।
আর অযথা কোন কোম্পানি খুইলেন না। যতক্ষণ না সিউর হচ্ছেন ওইটার প্রতি আসলেই আপনি অবসেসড। যেইটা থেকে আপনার ফেরার সুযোগ থাইকা যায়, সেইটা মোটেই অবসেশন না।
৩) আপনি আপনার জীবনের লক্ষ্যটা খুঁজে পাইছেন? ব্যস, কাজ শুরু করেন এখন


এইটা থেকে সেইটা ছোটাছুটির দুষ্টচক্র থেকে বাইর হয়ে যা করতে চান তা শুরু করে ফেলেন। আপনি আপনার কাজ শুরু করে দিলে অবাক হয়ে দেখবেন কত কত লোক আপনার সাথে যোগাযোগ করতেছে, একসাথে কাজ করতে আগ্রহ দেখাইতেছে। আপনার আইডিয়াটা কেবল একটা কাগজে লেখেন (হ, একটা কাগজেই) নিজের ডেরা থিকা বাইর হয়ে আশেপাশের লোকদের কাছে সেইটা নিয়া আলোচনা করতে থাকেন।
“আইডিয়া” চুরি যাইতে পারে এমন ভয় পুইষা লোকজনের সাথে আলোচনা বন্ধ কইরেন না। যতজনের সাথে সম্ভব আপনার আইডিয়া নিয়া কথা বলতে থাকেন। যদি কেউ আইডিয়া চুরি করে, তাইলে তারে করতে দেন, আপনিও তারে বাটে পাইবেন নিশ্চিত।
আর বইলেন না “আমার এই আইডিয়ার জন্য কারো বিনিয়োগ দরকার।” প্রথমেই বিক্রির চিন্তা করেন। একবার বিক্রি করা শুরু করতে পারলে হয়তো বুঝে যাবেন আপনার আসলে অন্যের বিনিয়োগের কোন দরকার নাই, ফাও আপনার ব্যবসার ভাগ কোন “বিনিয়োগকারী”রে দিতে হবে না। তারপরও যদি আপনার বিনিয়োগকারী কাউরে দরকারও হয়, সেক্ষেত্রেও আপনার এই বিক্রি করার অভিজ্ঞতা আপনারে সুবিধাজনক অবস্থায় রাখবে।


৪) অন্য আইডিয়ায় কান দিবেন না, যা করছেন সেইটাই করতে থাকেন, এবং সেইটা আরো ভালো করে চালাইয়া যান
আপনি শুরু করে দিলেই যে অন্য আইডিয়া আপনারে উস্কানো বন্ধ করে দিবে তা না। আপনার মনে অনেক আইডিয়া তারপরও আসবে। কিন্তু সেইটা যেন আপনার এখনকার ব্যবসা সংক্রান্ত হয়, কীভাবে আপনার এখনকার প্রোডাক্টরে আরো নিখুঁত আর গ্রহণযোগ্য করা যায় সেই নিয়তেই আইডিয়াগুলারে চালানোর চেষ্টা করতে থাকেন।


ফোকাস হারাইয়েন না, যেসব আইডিয়া আপনার বর্তমান ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত না সেগুলা থেকে তফাতে থাকেন। এমন চালায় গেলে দেখবেন মার্কেটিং বইয়ে যে “এন্টারপ্রেনার স্পিরিট” বিষয়ে পড়ছেন সেইটার একজন হয়ে উঠতেছেন আপনি, মুখের কথায়ই।
আপনি সত্যি অভিভূত হবেন যখন দেখবেন কত লোক আপনার কাছে ঘুরেফিরে আসতেছে, আরো কাজ চাইতেছে।
প্রতিযোগীতার কথা ভুইলা যান, নিজেরে অতিক্রম কইরা যাওয়াটাই আসলে আপনার চূড়ান্ত বিবেচনা হবে, তাই না?


৫) অন্যেরা কী ভাবতেছে সেইটা একদম গায়ে নিয়েন না
কারো কাছে কিছু প্রমাণের দায় থিকা যদি আপনি উদ্যোক্তা হইতে চাইছিলেন, তাইলে আবার প্রথম ধাপ থেকে ভাবা শুরু করেন। আগে এটা নিশ্চিত করেন আপনি যে “প্যাশনে” তাড়িত হইতেছেন, সেইটা আসলে আপনার ভিতর থেকে আসতেছে। প্যাশন সম্পর্কে আপনার বোঝাপড়াটা পরিষ্কার, আর আপনার উদ্যোগ দিয়ে আপনি কিছু একটা পরিবর্তন করার ইচ্ছা রাখেন।
নাইলে এটা আপনারে ধ্বংস করে দিবে, আপনি ফোকাস হারাইতেই থাকবেন, এদিকে ওদিকে ছোটাছুটি করবেন। কিছু করার কামড় না থাকলে ভিতরে আসলে কিছুই করা হবে না শেষ পর্যন্ত।
এখন কী? এই আর্টিকেল পড়া বাদ দিয়া নিজের কামে যান গা!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ